সাদাস্রাব, শ্বেতস্রাব - Leucorrhoea, Whites, Vaginal discharge
প্রথম কথা হলো শ্বেতস্রাব বা সাদাস্রাব কোন রোগ নয় এবং এটি শরীরের কোন ক্ষতিও করে না। সাধারণত ইহার মাত্রা বা উৎপাত অনেক বেড়ে গেলেই একে রোগের পর্যায়ে ফেলা হয়ে থাকে। প্রধানত মোটা, অলস স্বভাবের, অন্যকোন যৌনরোগ, শারীরিক ত্রুটি, নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্বভাব,
জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের রোগ এবং যাদের স্বামী দূর দেশে থাকেন, এসব মহিলাদের মধ্যে সাদাস্রাবের সমস্যা বেশী দেখা যায়। যদিও সাদাস্রাব বলা হয় কিন্তু ইহার রঙ সাদা, হলদে বা সবুজও হতে পারে। হতে পারে পাতলা অথবা আঠালো । কারো কারো স্রাব এতো ঝাঝালো হয় যে, যোনীমুখে
ঘা হয়ে যায়।
Sepia Officinalis : পেশা এবং পরিবারের লোকজনদের প্রতিও উদাসীনতা, রোগের গতি শরীরের নীচে থেকে উপরের দিকে, রোগী সবর্দা শীতে কাঁপতে থাকে, পেটের ভিতরে চাকার মতো কিছু একটা নড়াচড়া করছে মনে হওয়া, পাইলস, পায়খানার রাস্তা
বা জরায়ু ঝুলে পড়া (prolapse), খাওয়া-দাওয়া ভালো লাগে না, পায়খানার রাস্তা ভারী মনে হয়, মুখের মেছতা (chloasma), ঘনঘন গর্ভপাত (abortion), যৌনাঙ্গে এবং পায়খানার রাস্তায় ভীষণ চুলকানি, দীর্ঘদিনের পুরনো সর্দি, অল্পতেই অজ্ঞান হয়ে
পড়ে, দুধ হজম করতে পারে না, স্বভাবে কৃপন-লোভী, একলা থাকতে ভয় পায় ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে সিপিয়া খান। সাধারণত দশ হাজার শক্তিতে সপ্তাহে এক মাত্রা করে খান। Pulsatilla Pratensis : গলা শুকিয়ে থাকে কিন্তু কোন পানি পিপাসা থাকে না,
ঠান্ডা বাতাস-ঠান্ডা খাবার-ঠান্ডা পানি পছন্দ করে, গরম-আলো-বাতাসহীন বদ্ধ ঘরে রোগীনী বিরক্ত বোধ করে, আবেগপ্রবন, অল্পতেই কেঁদে ফেলে এবং যত দিন যায় ততই মোটা হতে থাকে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে পালসেটিলা ভালো কাজ করে।
Calcarea Carbonica : মোটা থলথলে শারীরিক গঠন, পা সব সময় ঠান্ডা থাকে, শিশুকালে দাঁত উঠতে বা হাঁটা শিখতে দেরী হয় থাকে, শরীরের চাইতে পেট বেশী মোটা, খুব সহজে মোটা হয়ে যায়, প্রস্রাব-পায়খানা-ঘাম সব কিছু থেকে টক গন্ধ আসে, হাতের তালু
মেয়েদের হাতের মতো নরম (মনে হবে হাতে কোন হাড়ই নেই), মাথার ঘামে বালিশ ভিজে যায়, মুখমন্ডল ফোলাফোলা, সিদ্ধ ডিম খেতে খুব পছন্দ করে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ক্যালকেরিয়া কার্ব হবে তার সবচেয়ে উত্তম ঔষধ। Lodium : প্রচুর খায় কিন্তু তারপরও দিনদিন শুকিয়ে
যেতে থাকে, গরম সহ্য করতে পারে না, ক্ষুধা খুব বেশী, দ্রুত হাঁটার অভ্যাস, দৌড়াতে ইচ্ছা হয়, লালাগ্রন্থি ও প্যানক্রিয়াসের রোগ, যে-সব রোগ অমাবশ্যা-পূর্ণমায় বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে আয়োডিয়াম খেতে হবে।
Sulphur : গোসল করা অপছন্দ করে, গরম লাগে বেশী, শরীরে চুলকানী বেশী, সকাল ১১টার দিকে ভীষণ খিদে পাওয়া, পায়ের তালু-মাথার তালুতে জ্বালাপোড়া, মাথা গরম কিন্তু পা ঠান্ডা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে কোন খেয়াল নাই ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে রোগীকে সালফার
খাওয়াতে পারেন। Mercurius Solubilis : মার্ক সল ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, ঘামে দুর্গন্ধ বা মিষ্টি গন্ধ থাকে, কথার বিরোধীতা সহ করতে পারে না, ঘুমের মধ্যে মুখ থেকে লালা ঝরে, পায়খানা করার সময় কোথানি,
পায়খানা করেও মনে হয় আরো রয়ে গেছে, অধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায়, রোগী ঠান্ডা পানির জন্য পাগল, ঘামের কারণে কাপড়ে হলুদ দাগ পড়ে যায় ইত্যাদি। উপরের লক্ষণগুলো থাকলে সাদাস্রাবেও মার্ক সল প্রয়োগ করতে পারেন।
Cinchona / China Officinalis : অত্যধিক সাদাস্রাবের কারণে দুর্বলতা দেখা দিলে চায়না খাওয়াতে হবে। চায়নার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো মাথা ভারী ভারী লাগে, চোখের পাওয়ার কমে যায়, অল্পতেই বেহুশ হয়ে পড়া, কানের ভেতরে ভো ভো শব্দ হওয়া, মেজাজ ভীষণ
খিটখিটে, আলো-গোলমাল-গন্ধ সহ্য করতে পারে না, হজমশক্তি কমে যাওয়া, পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। Hamamelis Virginiana : আক্রান্ত স্থানে তীব্র ব্যথা, স্পর্শ করা যায় না, কালচে রঙের রক্তক্ষরণ, রক্তনালী রোগ, পাইলস, মাসিকের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,
দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ, অন্ডকোষে ব্যথা, ডিম্বাশয়ে ব্যথা, নাক থেকে রক্তক্ষরণ, দপদপানি মাথাব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে হেমামেলিস খেতে হবে। ♦ ইহা ছাড়াও Alumina (কোষ্টকাঠিন্য স্বভাব), Borax (নীচে নামতে ভয় পায়),
Ammonium Muriaticum (বুক ধড়ফড়ানি) প্রভৃতি ঔষধ খেতে পারেন।