♦♦ প্রসব, সন্তান জন্মদান - Labour / Delivery / Childbirth
দীর্ঘ দশমাস গর্ভধারণের পর সন্তান প্রসব বা জন্মদান হলো মাতৃত্বের চূড়ান্ত বা শেষ ধাপ। প্রতিটি মায়ের কাছেই সন্তান ডেলিভারির বিষয়টি একটি পরম কাঙ্খিত আবার একই সাথে একটি ভীতিকর ঘটনা। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে দুই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। কোন কোন মায়েরা সিজারিয়ান
অপারেশানের ভয়ে হাসপাতাল বা ক্লিনিকেই যান না আবার কোন কোন মায়েরা প্রসব ব্যথার হাত থেকে বাচাঁর জন্য সিজার করতে নিজেরাই ডাক্তারদেরকে বার বার অনুরোধ করতে থাকেন।আসলে প্রসব ব্যথাটি খুবই ভয়ঙ্কর এতে সন্দেহ নেই কিন্তু এটি এমন কোন ব্যথা নয় যে আপনি
একেবারে প্রাণে মারা যাবেন। সে যাক, নরমাল ডেলিভারি হোক আর সিজারিয়ান অপারেশানই হোক, মোটকথা প্রসব কাজটি কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে হওয়া ভাল। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় (শিশুর ওজন বেশী হলে) মায়েদের প্রসবদ্বার
(birth canal) একটু আধটু ছিড়ে যায়। ফলে হাসপাতালে হলে ডাক্তার বা নার্সরা ছেড়া অংশটুকু সেলাই (stitch) করে দেন এবং এতে সংশ্লিষ্ট অঙ্গটির গঠন এবং সৌন্দর্য ঠিক থাকে। পক্ষান্তরে বাড়িতে সন্তান প্রসব করলে যেহেতু ছেড়া-ফাঁটা অংশটুকু আর সেলাই করা হয় না।
তাই সেই অঙ্গটির সৌন্দর্য বিকৃত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেটি স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক মিলনে আনন্দের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ইদানীং অবশ্য উন্নত বিশ্বের মহিলারাও দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের চাইতে বরং বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দিতে বেশী স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। এতে অবশ্য তেমন কোন সমস্যা নেই। এজন্য ডেলিভারির ওপর লেখা কিছু বই পড়ে নিন এবং (ইন্টারনেট থেকে) এই সংক্রান্ত কিছু ভিডিও দেখে
নিতে পারেন। পাশাপাশি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী (midwife) অথবা নার্সের সাহায্য নিতে ভুলবেন না। বিশেষত যারা গর্ভকালীন সময়ে হোমিও ঔষধ সেবন করেছেন এবং সন্তানের প্রসবের সময়ও হোমিও ঔষধের সাহায্য নিয়ে থাকেন, তাদের বেলায় সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে
কোন জটিলতা/ঝামেলার সম্ভাবনা নাই।এবং তাদের সন্তানদের জন্মের ঘটনাটি অনেকটা “জলবৎ তরলঙ্গ” অর্থাৎ পানির মতো সহজ ব্যাপারে পরিণত হয়। এমনকি যাদের কোমরের বা তলপেটের (pelvic cavity) গঠন ভালো নয় বলে ডাক্তাররা সিজার করতে বলেন
, তাদেরও দেখেছি শিশু এবং মায়ের কোন ক্ষতি ছাড়াই নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। তাছাড়া অতীতে যাদের সিজার হয়েছে, তারাও হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে পারেন, নিজের এবং শিশুর কোন ক্ষতি ছাড়াই।
Pulsatilla Pratensis : সহজ এবং ঝামেলামুক্ত ডেলিভারির জন্য খাওয়াবেন পালসেটিলা (Pulsatilla Pratensis) নামক ঔষধটি। যদি ডেলিভারি ডেট অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ব্যথা না ওঠে অথবা প্রসব্যথা কম ওঠে অথবা ব্যথা একবার আসে আবার
চলে যায়, তবে পালসেটিলা (Pulsatilla Pratensis) নামক হোমিও ঔষধটি আধা ঘণ্টা পরপর খাওয়াতে থাকুন। এটি প্রসব ব্যথাকে বাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্রসব কাজ সমাধা করার ব্যাপারে একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। এমনকি ডাক্তাররা যদি সিজারিয়ান অপারেশান করার
জন্য ছুড়িতে ধার দিতে থাকে, তখনও আপনি পালসেটিলা খাওয়াতে থাকুন। দেখবেন ছুড়ি ধার হওয়ার পূবেই বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এমনকি গর্ভস্থ শিশুর পজিশন যদি ঠিক না থাকে, তবে পালসেটিলা তাও ঠিক করতে পারে। শিশুর মাথা যদি উপরের
দিকে অথবা ডান্তেবামে ঘুরে থাকে, তবে দুয়েক মাত্রা পালসেটিলা খাওয়ালেই দেখবেন শিশুর মাথা ঘুরিয়ে অটোমেটিকভাবে নীচের দিকে নিয়ে এসেছে। সাধারণত কথায় কথায় কেঁদে ফেলে, মন খুবই নরম - স্নেহপরায়ন, শীতের চাইতে গরম লাগে বেশী, খুব সহজেই মোটা হয়ে যায়,
ব্যথা ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করে ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে পালসেটিলা যাদুর মতো কাজ করে। Actea Racemosa / Cimicifuga : একটিয়া রেসিমোসা বা সিমিসিফিউগা নামক হোমিও ঔষধটি ডেলিভারিতে বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধ। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হইল প্রসবের প্রথম পর্যায়ে কাঁপুনি দেখা দেয়, ভয়জনিত উত্তেজনা থেকে খিচুনি হয়, জরায়ু মুখ শক্ত হয়ে যায়- খুলতে চায় না, ব্যথা খুবই তীব্র, গোলমালে বৃদ্ধি পায়, থেকে থেকে বাড়ে-কমে, প্রসব ক্রিয়া মনে হয় বেশ ঢিমেতালে চলছে। Gelsemium Sempervirens : জেলসিমিয়ামের জ্বরের প্রধান লক্ষণ হলো সাহসহীনতা, শরীরের জোর বা মনের জোর কম হওয়া, রোগীর মধ্যে ঘুমঘুম ভাব থাকে বেশী, শরীর ভারভার লাগে, মাত্রাতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে রোগী নড়াচড়া করতে পারে না এবং একটু নড়াচড়া করতে গেলে শরীর কাঁপতে থাকে, ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার ভয় এবং হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় ইত্যাদি লক্ষণ আছে। Chamomilla: ক্যামোমিলার প্রধান লক্ষণ হলো ইহার রোগীরা ব্যথার প্রতি অত্যন্ত সেনসিটিভ হয় অর্থাৎ ব্যথা একদম সহ্যই করতে পারে না। ব্যথার তীব্রতায় রোগী দিগবিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়ে , তার জ্ঞানও লোপ পেয়ে যায়, সে ডাক্তার বা নার্সকে পর্যন্ত গালাগালি দিতে থাকে : তবে তাকে ক্যামোমিলা খাওয়াতে হবে। ক্যামোমিলা হলো অভদ্র রোগীদের ঔষধ। কোন রোগী যদি ব্যথার হাত থেকে বাঁচার জন্য ডাক্তারকে সিজার করতে বার বার। কাকুতি-মিনতি করতে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে সে ক্যামোমিলার রোগী অর্থাৎ তাকে ক্যামোমিলা খাওয়ানো একেবারে ফরজ। √ প্রসবের পরে অতিরিক্ত রক্তস্রাবের প্রবনতা থাকলে প্রসবের পূর্বে দু’তিন মাত্রা Millefolium (শক্তি ৩০, ২০০) খেয়ে নিন। √ যারা প্রতিবারই মৃত সন্তান প্রসব করে তাদের গর্ভের শেষ দুমাস প্রত্যহ সিমিসিফিউগা (Cimicifuga শক্তি Q,৩,৬) খাওয়ান এবং স্বামীর যৌনরোগের ইতিহাস থাকলে Aurum Metallicum (শক্তি ২০০১ সপ্তাহে একমাত্রা করে দুই মাস খান। √ যাদের ঠোককাটা, জন্মান্ধ, পঙ্গু, বোবা, বোকা, প্রতিবন্ধি সন্তান হয়েছে, তাদের পরবর্তী সন্তান গর্ভে আসার সাথে সাথে Sulphur, Thuja Occidentalis এবং calcarea phos (শক্তি ২০০) প্রতিটি ঔষধ সপ্তায় একমাত্রা করে একমাস হিসাবে খাওয়ান (অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।