♦♦ জলাতঙ্ক - Hydrophobia, Rabies
জলাতঙ্ক একটি ভাইরাস ঘটিত মারাত্মক রোগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি জল বা পানিকে ভয় পায়। এজন্য এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে জলাতঙ্ক। সাধারণত জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত অথবা জলাতঙ্ক রোগের ভাইরাস বহনকারী কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বাদুর, খাটাশ ইত্যাদি প্রাণীর কামড়
থেকে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।এমনকি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত মানুষের কামড়েও অন্য কোন মানুষ বা পশু- পাখি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পাগলা কুকুরের কামড়ে এই রোগ হয় বলে সাধারণ মানুষের নিকট বহুল প্রচলিত। সাধারণত রক্ত, মাংস এবং লালার মাধ্যমে
এই রোগ ছড়ায়। কামড় খাওয়ার পরে রোগটি দেখা দিতে ১০ দিন থেকে ১ বৎসর পর্যন্ত লাগতে পারে।এই রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জ্বর, গলাব্যথা, খিচুনি, মুখ দিয়ে ফেনা এবং রক্তযুক্ত লালা নির্গত হওয়া, ভয়ঙ্কর জিনিস দেখা, খিচুনির মধ্যেও জ্ঞান ঠিক থাকা, পিঠ বাঁকা
হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, প্রচুর লালা নিঃসরণ, সামনে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে চায়, কুকুরের মতো চীৎকার করা, খিচুনি (convulsions without loss of consciousness), মুখ দিয়ে ফেনা এবং রক্তযুক্ত লালা নির্গত হওয়া (frothy- bloody
mucus), ভয়ঙ্কর জিনিস দেখা (hallucinations), খিচুনির মধ্যেও জ্ঞান ঠিক থাকা, পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া (opisthotonos), শ্বাসকষ্ট, প্রচুর লালা নিঃসরণ (abundant salivation), সামনে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে চায় (tendency
to bite), কুকুরের মতো চীৎকার করা (hoarse cry), সাময়িক প্যারালাইসিস (momentary paralysis) ইত্যাদি ইত্যাদি।এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত বলে এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা বলে থাকেন। কেননা এলোপ্যাথিতে এই রোগের কোন চিকিৎসা
আজও আবিষ্কৃত হয় নাই। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে এই রোগের কাযর্কর চিকিৎসা আছে। তাই এই রোগের জন্য সবারই হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করা উচিত।
এবং তাতে অন্তত শতকরা ৫০ ভাগ রোগীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়ে থাকে।কিন্তু অনেকেই না জানার কারণে হোমিও চিকিৎসা নিতে আসেন না। ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মন্দির আছে যার আশেপাশে অনেক বানর এবং হনুমান বসবাস করে। ফলে এসব
মন্দিরে আগত তীর্থযাত্রীদের অনেকেই এসব জংলী বানর এবং হনুমানের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হন। ইন্টারনেটে দেখলাম, একজন ভারতীয় হোমিও চিকিৎসক এরকম অগণিত জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত তীর্থযাত্রীকে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত করার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ।কামড় খাওয়ার
পরে দংশনকারী প্রাণীটিকে হত্যা করতে নাই। বরং তাকে পনের দিন প্যন্ত বেধে রেখে লক্ষ্য করতে হবে যে, তাতে পাগলা (অথাৎ জলাতঙ্ক রোগের কোন লক্ষণ প্রকাশ পাই কিনা না। এই সময়ের মধ্যে যদি সে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তবে আপনাকে অবশ্যই জলাতঙ্ক
রোগের টিকা / ভ্যাকসিন নিতে হবে। সাধারণত এসব প্রাণীর কামড় খাওয়ার সাথে সাথেই পাঁচটি টিকা/ ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া জরুরি।
আগে নাভীর গোড়ায় ১৪টি ইনজেকশান নিতে হতো কিন্তু বতর্মানে হাতের পেশীতে ৫টি নিতে হয়। সাধারণত ১, ৭, ১৪, ২৮, ৯০ তম দিন হিসাবে পাঁচটি ইনজেকশান নিতে হয়। তবে এলোপ্যাথিক টিকা/ ভ্যাকসিন ইনজেকশান নেওয়ার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিক টিকা/ ভ্যাকসিনটিও
খেয়ে নেওয়া উচিত। তাহলে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকা যায়। কেননা ঠিকমতো প্রস্তুত না করা, মেয়াদ চলে যাওয়া ইত্যাদি নানান কারণে এলোপ্যাথিক টিকা/ ভ্যাকসিন ইনজেকশান নেওয়ার পরেও আপনি জলাতঙ্ক রোগের আক্রান্ত হতে পারেন। আবার কোন কোন দেশ ভ্যাকসিন
উৎপাদনে স্মায়ু কলাতন্তু (nervous tissue) ব্যবহার করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ভ্যাকসিন গ্রহীতা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারেন। আমেরিকার একজন বিখ্যাত পশুরোগ চিকিৎসাবিজ্ঞানীর মতে, কুকুরের দংশনের শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই জলাতঙ্কের টিকা / ভ্যাকসিন
নেওয়া বৃথা।অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী মনে করেন, যারা সব রোগীকেই জলাতঙ্কের টিকা নিতে পরামর্শ দেন, তারা বহুজাতিক ভ্যাকসিন কোম্পানীর দালাল ছাড়া কিছুই না। Hydrophobinum / Lyssinum : লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা আবিস্কারেরও পঞ্চাশ বছর আগে
আমেরিকান হোমিও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডাঃ কন্সট্যান্টাইন হেরিং জলাতঙ্ক (llydrophobia/Rabies) রোগের ভাইরাস থেকে জলাতঙ্কনাশী ঔষধ হাইড্রোফোবিনাম (Hydrophobinum/ Lyssinum) তৈরী করে জলাতঙ্ক চিকিৎসায় সফলতার সাথে ব্যবহার
করেছেন।হাইড্রোফোবিনাম বা লাইসিলাম নামক হোমিও ঔষধটিকে জলাতঙ্ক রোগের একেবারে স্পেসিফিক ঔষধ এবং টিকা (Vaccine) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বুক ফাটা তৃষ্ণা, পানিকে ভয় পাওয়া, চকচকে বা উজ্জ্বল বস্তু বা আলো অসহ্য লাগা, পানির শব্দকে ভয় পাওয়া, পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে থাকা (permanent erection) ইত্যাদি এই ঔষধের প্রধান লক্ষণ। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য অথবা জলাতঙ্ক
রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য এই ঔষধটি (২০০ বা আরো ওপরের শক্তিতে) রোজ এক বেলা করে অন্তত তিন দিন খান। পরবর্তীতে সপ্তাহে এক মাত্রা করে কয়েক সপ্তাহ খান। Tanacetum (টেনাসিটাম) : জলাতঙ্ক রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ
ঔষধ। এই ঔষধটি যেই গাছের পাতা ও ফুল থেকে তৈরী করা হয়, সেটি প্রাচীন কাল থেকে রাশিয়ায় জলাতঙ্ক রোগের কবিরাজি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পশুদের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এই ঔষধটি তাদের মধ্যে খিচুনি (convulsions without loss
of consciousness), মুখ দিয়ে ফেনা এবং রক্তযুক্ত লালা নিগর্ত হওয়া (frothy- bloody mucus), ভয়ঙ্কর জিনিস দেখা (hallucinations), খিচুনির মধ্যেও জ্ঞান ঠিক থাকা, পিঠ বাঁকা হয়ে যাওয়া (opisthotonos), শ্বাসকষ্ট, প্রচুর লালা
নিঃসরণ (abundant salivation), সামনে যাকে পায় তাকেই কামড় দিতে চায় (tendency to bite), কুকুরের মতো চীৎকার করা (hoarse cry), সাময়িক প্যারালাইসিস (momentary paralysis) ইত্যাদি লক্ষণ উৎপন্ন করতে পারে।
কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে এটি জলাতঙ্কের একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধরূপে গণ্য হয়। এটি একই সাথে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক (Vaccine) হিসাবেও প্রমাণিত একটি সফল ঔষধ। Cantharis (ক্যান্থারিস) : ক্যান্থারিস জলাতঙ্কের সবচেয়ে ভালো ঔষধ : কেননা কুকুরের মতো
আওয়াজ করা, মুখ থেকে ফেনা নির্গত হওয়া, রোগীর চারপাশ সম্পর্কে অসচেতনতা ইত্যাদি প্রধান প্রধান সব লক্ষণই ক্যান্থারিস পরীক্ষায় পাওয়া গেছে। Belladonna (বেলেডোনা) : বেলেভোনা জলাতঙ্কের আরেকটি সেরা ঔষধ। দৈত্য-দানব দেখে, চারপাশের ঘটনা-দুর্ঘটনা সম্পর্কে
কোন খবর রাখে না, পানি পিপাসা আছে কিন্তু পানি দেখলে ভয় পায়, কেননা পানির ঢেউ চকচক দেখলে খিচুনি বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি ইহার প্রধান লক্ষণ। Stramonium (স্ট্রামোনিয়াম) : আগ্রাসী বা আক্রমণাত্মক ধরনের আচরণ, লুচ্চা লম্পটদের মতো আচরণ ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে
স্ট্র্যামোনিয়াম প্রয়োগ করুন। Chamomilla (ক্যামোমিলা) : ক্যামোমিলা ঔষধটি যদিও সচরাচর জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় না কিন্তু একজন ভারতীয় চিকিৎসক ক্যামোমিলার সাহায্যে জলাতঙ্ক নিরাময় করার দাবী করেছেন। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই !
প্রকৃতপক্ষে ক্যামোমিলার রোগীরা হয় অত্যন্ত সেনসিটিভ। অন্যদিকে জলাতঙ্ক রোগীরাও হয় অত্যন্ত সেনসিটিভ। তারা আলো সহ্য করতে পারে না, শব্দ আওয়াজ সহ্য করতে পারে না, স্পর্শ সহ্য করতে পারে না, ব্যথা সহ্য করতে পারে না। কাজেই জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসায়
ক্যামোমিলার কথাও আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। Lachesis (ল্যাকেসিস) : পিপাসা, আক্ষেপ, সেনসিটিভনেস, স্নায়বিক বৈকল্য ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে ল্যাকেসিস দিতে পারেন।