♦♦ যকৃত প্রদাহ, জন্ডিস, পান্ডুরোগ - Hepatitis, Jaundice
ইদানীং হেপাটাইটিস নামক রোগটি নিয়ে চিকিৎসক সমাজ এবং ঔষধ কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করতেছে। এই কাজে সুবিধার জন্য রোগটিকে তারা আবার এ. বি. সি. ডি. প্রভৃতি ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস একটি
ভাইরাসঘটিত রোগ। একথা ঠিক যে, হেপাটাইটিস ভাইরাসটি আমাদের লিভারের স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করার মাধ্যমে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি করে রোগীর মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।অর্থাৎ হেপাটাইটিসকে বিনা চিকিৎসায় রেখে দিলে তা যে কাউকে নির্ঘাত স্বর্গে পাঠিয়ে দেবে।
তবে সমগ্র প্রক্রিয়াটি সমপন্ন করতে ভাইরাসটির আনুমানিক পনের থেকে বিশ বছর সময় লাগে। এলোপ্যাথিতে ভাইরাস নিধনকারী কোন ঔষধ না থাকাতে তারা হেপাটাইটিসকে ভীতিকর রোগরূপে প্রচার করছে। ভাইরাসটি যথেষ্ট মারাত্মক একথা যেমন সত্য; তেমনি এটাও সত্য যে,
বিশুদ্ধ পানি এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাসটি নিজে নিজেই শরীর থেকে চলে যায়।তারপরও যারা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে চান, তারা নিম পাতার রস বা চিরতার রস দু-চার-ছ’মাস খেতে পারেন। হেপাটাইটিসের জন্য যারা চিকিৎসা নিতে চান
, তাদের অবশ্যই একজন ভালো হোমিও চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। কেননা কম খরচ এবং কম কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে একমাত্র হোমিওপ্যাথিই আপনাকে হেপাটাইটিস থেকে মুক্ত করতে সক্ষম। রোগীর শারীরিক লক্ষণ, মানসিক লক্ষণ এবং বংশগত রোগ লক্ষণের ভিত্তিতে
ঔষধ প্রয়োগ করলে ভাইরাস বাপ-বাপ ডাক ছেড়ে পালাবে।হ্যাঁ, রোগীর কোন রকম শারীরিক-মানসিক দুর্বলতা থাকলে উনিক জাতীয় কিছু ঔষধও সেবন করানো যেতে পারে। একই প্রক্রিয়ায় কিছুদিন পূর্বে আমি একটি রোগীকে হেপাটাইটিস থেকে মুক্ত করেছিলাম যাতে সময় লেগেছিল
ছয়মাস এবং খরচ হয়েছিল তিনশ টাকার মতো। সে যাক, ব্রিটিশ হোমিও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডাঃ বার্নেট বলেছিলেন, ”এলোপ্যাথির দৈত্যাকার বিশেষজ্ঞও একজন সামান্য হোমিও চিকিৎসকের নিকট ব্যর্থ হতে বাধ্য যদি সে হ্যানিম্যানের পদাঙ্ক যথাযথভাবে অনুসরণ করে। কাজেই ইদানিং
হেপাটাইটিস নিয়ে যারা বিপাকে আছেন তাদেরকে আমি দিশাহারা না হওয়ার অনুরোধ করব । হেপাটাইটিস বা জন্ডিস বতর্মানে সবচেয়ে কমন সংক্রামক রোগে পরিণত হয়েছে।পাইপ লাইনের ময়লা পানি এবং হোটেল-রেস্তোরার পচা-বাসি খাবার খাওয়ার কারণে শহরের মানুষদের মধ্যে
এই রোগের উৎপাত বেশী দেখ যায়। যৌনকম, মাদকসেবন এমনকি হ্যাণ্ডশ্যাকের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। নানা রকমের ভাইরাস আমাদের লিভারকে আক্রমণ করে।
হেপাটাইটিসের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জণ্ডিস বা হলুদ প্রস্রাব, লিভার বড় হয়ে যাওয়া,
লিভারের কাজে গোলমাল, মাটির মতো পায়খানা, ক্ষুধাহীনতা, হজমে গোলমাল ইত্যাদি।যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ বিনা চিকিৎসাতেই ভাল হয়ে যায় : তথাপি যাদের শরীরে বিভিন্ন দোষ- ক্রটিতে ভরা তারা ধীরে ধীরে লিভার ড্যামেজ এবং লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অকাল
মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে। যদিও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে হেপাটাইটিসের নিরাময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়, কিন্তু হোমিও চিকিৎসায় অন্তত একশগুণ কম খরচে হেপাটাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অনেকে হেপাটাইটিসের হাত থেকে বাচাঁর জন্য জলদি জলদি
হেপাটাইটিসের টিকা (Vaccine) নিয়ে ফেলেন। কিন্তু এতে আপনার ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, ব্রেন ড্যামেজ, প্যারালাইসিস, হাপাঁনি, অটিজম, ধ্বজভঙ্গ ইত্যাদি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে আরো বেশী বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। Nux Vomica : হেপাটাইটিস বা
জণ্ডিসের বা লিভারের রোগের একটি প্রধান ঔষধ হলো নাক্স ভমিকা।
যারা অধিকাংশ সময়ে পেটের অসুখে-বদহজমে-কোষ্টকাঠিন্যে ভোগে, বদমেজাজী, ঝগড়াটে, বেশীর ভাগ সময় শুয়ে-বসে কাটায়, কথার বিরোধীতা সহ্য করতে পারে না এবং অল্প শীতেই কাতর হয়ে পড়ে, এটি তাদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। পান-সিগারেট-মদ-গাজা-
ফেনসিডিল-হিরোইন দীর্ঘদিন সেবনে হেপাটাইটিস হলে নাক্স খেতে হবে। মাত্রা হবে নিম্নশক্তিতে (৫, ৩, ৬ ইত্যাদি) ৫ থেকে ১০ ফোটা করে রোজ তিনবার। Podophyllum : পডোফাইলাম হেপাটাইটিসের একটি সেরা ঔষধ। দুরবলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাটি রঙের পায়খানা,
জিহ্বায় জ্বালাপোড়া, জ্বরের সময় প্রলাপ বকা, ক্ষুধাহীনতা ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে নিশ্চিন্তে পডোফাইলাম খেতে পারেন। chelidonium : চেলিডোনিয়াম লিভারের রোগের একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। ডান কাধের পেছনে ব্যথা, ডান ফুসফুস এবং তলপেটের ডান পাশে ব্যথা,
মাটির রঙের বা হলুদ পায়খানা, কোষ্টকাঠিন্য, বাতের ব্যথা, অতিরিক্ত গরম খাবার-পানীয় না খেলে বমি হওয়া, পনির খেতে অনিচ্ছা, চেহারা হলদেটে হওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে চেলিডোনিয়াম সেবন করুন। Digitalis : ডিজিটালিস লিভারের রোগের
আরেকটি প্রধান ঔষধ। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো মাটির রঙের পায়খানা, অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা, খিটখিটে মেজাজ, একলা থাকতে চায়, অতীতে যাদের গনোরিয়া বা প্রস্রাবের ইনফেকশান হয়েছিল, নাড়ির গতি খুবই কম মিনিটে ৫০ বা তারও কম), হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা,
চেহারা নীলচে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। Myrica Cerifera : মাইরিকা লিভারের রোগের শ্রেষ্ট ঔষধগুলির মধ্যে একটি।
ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হলো গলায় প্রচুর আঠালো মিউকাস হওয়া, ছাই রঙের পায়খানা, লিভারের জায়গায় ব্যথা, ঘুমঘুম ভাব, বিরক্তিকর মাথাব্যথা, হলুদ চক্ষু, হলুদ জিহ্বা, শরীর ব্যথা, কাধের ভেতরে ব্যথা, চুলকানি, মুখের ওপর পোকামাকড় হাঁটতেছে। এমন মনে হওয়া ইত্যাদি।
Lycopodium Clavatum : লাইকোপোডিয়াম লিভারে রোগের একটি শক্তিশালী ঔষধ। লাইকোপোডিয়ামের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো রোগের মাত্রা বিকাল ৪-৮টার সময় বৃদ্ধি পায়, এদের রোগ ডান পাশে বেশী হয়, রোগ ডান পাশ থেকে বাম পাশে যায়, এদের পেটে প্রচুর
গ্যাস হয়, এদের সারা বৎসর প্রস্রারে বা হজমের সমস্যা লেগেই থাকে, এদের দেখতে তাদের বয়সের চাইতেও বেশী বয়ষ্ক মনে হয়, স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ কিন্তু ব্রেন খুব ভালো, এরা খুবই সেনসিটিভ এমনকি ধন্যবাদ দিলেও কেদে ফেলে ইত্যাদি ইত্যাদি। Carduus Marianus :
কারডুয়াস মেরি লিভারের রোগের আরেকটি যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ। হেপাটাইটিস, জন্ডিস, ভেরিকজ ভেইন, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার ইত্যাদি রোগে এটি দারুণ কাজ করে থাকে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো মাটির মতো চেহারা, ক্ষুধাহীনতা, বুক ধড়ফড়ানি,
পেট ফাঁপা, মাথাঘুড়ানি, পেটের ভেতরে গড়গড় শব্দ, একবার কোষ্টকাঠিন্য একবার ডায়েরিয়া, আড়াআড়িভাবে লিভারের স্ফীতি, রক্তবমি, নাক থেকে রক্তপাত, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, লিভারে ব্যথা, ভীষণ দুবর্লতা ইত্যাদি ইত্যাদি।