শোক, মানসিক আঘাত ও আশাভঙ্গের জন্য রোগ। |
ক্ষনে ক্ষনে মেজাজের পরিবর্তন ঘটে, হাসাহাসি করছে আবার পর মূহুর্তেই বিষন্নভাব, দুঃখ, রাগ বা অভিমান মনের ভিতর চেপে রাখে, নির্জনে থাকতে চায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ও ফোঁপিয়ে কাঁদে, সহজে ভয় পায়, ডাঃ হেরিং বলেন ইগ্নেসিয়া রোগী দুঃখিত থাকতেই ভালোবাসে। |
অদ্ভুত বিপরীত লক্ষণ সমুহ দেখা যায় যেমন- জ্বরে শীতের সময় তৃষ্ণা কিন্তু উত্তাপের সময় পিপাসা নেই, শক্ত দ্রব্য খেলে গলা ব্যথার উপশম, যখন গম্ভীর হওয়া উচিত তখন হাসি। |
পাকস্থলি খালি খালি অনুভূতি, দীর্ঘশ্বাস নিলে উপশম। উপযোগিতা – স্নায়বিক রোগীদের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী। সহজেই উত্তেজিত হন, অত্যনুভূতিযুক্ত, এরূপ মহিলাদের ক্ষেত্রে উপযোগী। চুল কাল, রঙ ময়লা কিন্তু মন খুব নরম, সবকিছু বোঝেন তাড়াতাড়ি ও কাজকর্ম তাড়াতাড়ি করেন এমন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । গৌরবর্ণা, নমনীয়, একটুতেই চোখে জল, কাজকর্ম ধীরে ধীরে করে ও কি করবে ঠিক করে উঠতে পারে না—এই সব লক্ষণ বিশিষ্ট পালসেটিলার সম্পূর্ণ বিপরীত হল ইগ্নেসিয়া । সবকিছুতেই অত্যন্ত অসঙ্গতি দেখা যায়- কানে গর্জনধ্বনি অথচ গান বাজনায় সেই অবস্থার উপশম, অর্শের যন্ত্রণা চলাফেরায় কম থাকে। গলায় ব্যথা কিছু গিললে কম থাকে পাকস্থলীতে খালিখালি বোধ কিন্তু আহারে তার উপশম নাই, কাশি—যতই কাশে ততই কাশি বেড়ে যায়। পথ চলতে চলতে থেমে গেলে কাশি শুরু হয় (এষ্টাকাস্-ফ্লেব); দুঃখ অথচ হাসিতে ফেটে পড়ে, ধ্বজভঙ্গ কিন্তু সঙ্গমের ইচ্ছা হয়। জ্বরে শীত ভাবের সময় পিপাসা কিন্তু উত্তাপ এর সময় পিপাসা হয় না, বিশ্রামের সময় মুখের রঙ পালটে যায়। অতিদ্রুত, অবিশ্বাস্য অল্প সময়ের মধ্যে মানসিক অবস্থা পাল্টে যায়— আনন্দ হতে দুঃখ, হাসি পাল্টে গিয়ে কান্না হতে থাকে (কফিয়া, ক্রোকাস, নাক্স-ম); খামখেয়ালী মনের ভাব । বহুদিন ধরে দুঃখ চাপ থেকে মানসিক ও দৈহিক উভয়ভাবে অবসন্ন তাদের পক্ষে উপযোগী। অনিচ্ছায় দীর্ঘনিঃশ্বাস পড়ে (ল্যাকে সাথে পাকস্থলীর ভেতর একপ্রকার শূন্যতাবোধ থাকে শরীরে দুর্বলতা বোধ আহারে কিন্তু ঐ বোধের উপশম হয় না (হাইড্রাষ্টিস, সিপিয়া)। রাগ, শোক বা প্রেমে ব্যর্থতার কুফলে (ক্যাল্ক-ফস, হায়োস) ব্যবহৃত হয়; কল্পনায় নানা কষ্টের কথা একা বসে চিন্তা করে থাকে। একা একা থাকতে চায় । সূক্ষ্ম, অনুভূতি, থাকে, তীক্ষ্ণ বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন এমন রোগীতে ব্যবহার হয় । অস্থির, অধৈর্য, কোন কাজের উদ্দেশ্য থাকে না, ঝগড়াটে, এমন রোগীতে প্রযোজ্য । মনে আনন্দ থাকলে অপূর্ব ব্যবহার করে কিন্তু সামান্য উত্তেজনায় বিব্রত বোধ করে, সহজেই অপমানিত বোধ করে । সামান্য দোষ ধরলে বা প্রতিবাদ করলে রাগ হয়ে যায় ও নিজমনে গজরাতে থাকে । শিশুকে বকাঝকা করলে, সামান্য মারধোর করলে বা জোর করে বিছানায় শুইয়ে দিলে অসুস্থ হয়ে পড়ে বা ঘুমের মধ্যে তড়কা হয়, হাত পা খিঁচতে থাকে । দুঃসংবাদের কুফলে, বহুদিনের জমা অসন্তোষ হতে বিরক্তি বা রাগ, মনের কষ্ট চেপে রেখে, লজ্জাজনক ঘটনা বা মনে বা দেহে কোন অত্যাচার-এর ঘটনার কুফলে রোগ হলে (ষ্ট্যাফি) এ ওষুধে সারিয়ে দেয় । মাথাযন্ত্রণা — যেন মাথার পাশ (Side) দিয়ে একটা পেরেক ঢোকানো হচ্ছে এরকম অনুভূতি ঐ পাশে চেপে শুলে যন্ত্রণা কমে যায় (কফিয়া, নাক্স, থুজা) । তামাকের গন্ধ সহ্য করতে পারে না, ধূমপানে বা বিড়ি সিগারেটের ধোয়ায় মাথা যন্ত্রণা শুরু হয় বা বেড়ে যায়, কথা বলার সময় বা কিছু চিবালে গালে কামড় লাগে। আহারের সময় মুখে কোন ছোট স্থানে ঘাম বার হতে থাকে। ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না। (কফিয়া, ক্যামো)। কোষ্ঠবদ্ধতা – গাড়ীতে চড়ে, যেন অন্ত্রে পক্ষাঘাত হয়েছে, সাথে, অত্যন্ত পায়খানার বেগ—ওপর পেটে বেশী অনুভব হয় (ভিরেট্রাম) ঐ সাথে অত্যন্ত পেটে বেদনা, পায়খানায় যেতে ভয় পায়। মহিলাদের কোষ্ঠবদ্ধতা, যারা অত্যধিক কফি পান করেন। মলত্যাগের সময় অল্প কোঁথ দিলে, সামনের দিকে ঝুঁকলে বা ভারী জিনিষ তুললে মলদ্বার দিয়ে রেক্টাম বার হয়ে পড়ে (এসি-নাই, পড়ো, রুটা); মল তরল থাকলে ঐ বেশি হয় । অর্শরোগ – প্রতিবার মলত্যাগের সময় রেক্টাম বার হয়ে পড়ে, হাত দিলে ঠেলে ঢোকাতে হয় । তীব্র উঁচ ফোটানো ব্যথা রেক্টাম হতে ওপরদিকে এগিয়ে যায় (এসি-নাই); ঐ ব্যথা মলত্যাগের পর কয়েক ঘন্টা যাবৎ হতে থাকে (র্যাটানহিয়া, সালফ) । রোগী ঘুমিয়ে পড়লে দেহের কোন একটা বিশেষ অঙ্গ বা সারাদেহ লাফিয়ে ওঠে, ঝাঁকি দিয়ে ওঠে এমনকি খিঁচতেও থাকে । দেহে কোন ছোট্ট বৃত্তাকার স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে । জ্বর – শীত অবস্থায় মুখ লাল (ফেরাম) হয়ে যায় শীতভাবের সাথে পিপাসা কেবলমাত্র শীতাবস্থায় পিপাসা হয়; বাইরে থেকে তাপ লাগলে উপশম। তাপ অবস্থায় কোন পিপাসা থাকে না। গায়ে ঢাকা দিলে তাপাবস্থা বেড়ে যায় (ঢাকা দিলে কমে নাক্স-ভ) । রোগ – এর কষ্টগুলো ঠিক একই সময়ে ফিরে ফিরে আসে । রক্তপ্রধান ও পিত্ত প্রাবল্য পুরুষ রোগীতে নাক্স-ভ এর যে সম্বন্ধ। মহিলাদের ক্ষেত্রে ইগ্নের সেই সম্বন্ধ, উত্তর আমেরিকায় নাক্স-ভ এর রোগী থেকে ইগ্নেসিয়ার রোগী সংখ্যা বেশী হেরিং । সম্বন্ধ — কফিয়া, নাক্স-ভ, ট্যাবাকাম এর সাথে শত্রু সম্বন্ধ। ইগ্নেসিয়া অপব্যবহারের কুফল পালস্ দূর করে । বৃদ্ধি – তামাক হতে, কফি খেলে, ব্রান্ডিমদ খেলে, ছোঁয়া লাগলে, নড়াচড়ায়, তীব্র গন্ধে, মানসিক আবেগ বা দুঃখে রোগ লক্ষণ বাড়ে । উপশম – উত্তাপে, জোরে চাপলে (চায়না), গিলে ফেললে, হেঁটে বেড়ালে । শক্তি – নিম্ন হতে উচ্চশক্তি ০/১ হতে ০/৩০ । [Haemorrheids = অর্শ-মলদ্বার ও রেক্টাম (Anorectum) সংলগ্ন রক্তবাহী শিরা সমূহে (venous plexus) শিরাগুলো চাপে বেড়ে যায় ও জড়িয়ে গিয়ে দলামত পাকিয়ে যায়। অর্শ দু-প্রকার—বাহ্যিক (External)-মলদ্বার ও রেক্টামের বাইরের শিরাগুলো আক্রান্ত হয়। অভ্যন্তরীণ (Internal)-মলদ্বার ও রেক্টামের ভেতর শিরাগুলো আক্রান্ত হয় । চিকিৎসা – লক্ষণের প্রাবল্যের উপর নির্ভর করে। অর্শ কতদূর বিস্তৃত তার উপর নির্ভর করে না । বহুক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা পরিবর্তন ও মল নরম হবার জন্য কিছু ব্যবহারে মলত্যাগে কোঁথানি নিবৃত্ত করলেই উপশম হয়। অর্শের তরুণ আক্রমণ ও তরুণ প্রদাহ কমে না যাওয়া পর্যন্ত অস্ত্র চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না । তরুণ প্রদাহের পর সময় পাওয়া গেলে বহুক্ষেত্রে ঐ স্থানের টিস্যু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে । শ্রেণী বিভাগ— (A) H. Eternal—মলদ্বার-এর মিউকাস মেমব্রেন ও সংলগ্ন চামড়ার শিরাগুলো চাপে বেড়ে যায়, বাইরে বেরিয়ে আসে। (B) H. Interant- রেক্টামের শেষভাগ যেখানে মলদ্বার (Anus)-এর সংযোগস্থল সেখানে শিরাগুলো আক্রান্ত হয় । (c) H. Prolapsed- আভ্যন্তরীণ অর্শ মলদ্বার দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে । (D) H. Strangulated- আভ্যন্তরীণ অর্শ বাইরে বের হয়ে মলদ্বারের চাপে আটকে থাকে ও আক্রান্ত শিরায় রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। অর্শ হতে রক্ত বার হলে ব্লিডিং পাইলস্ ও রক্ত বার না হলে ব্লাইন্ড পাইলস, বা অন্ধবলি বলে । |